সূর্য উপাসনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লোকোৎসব ছট পুজো। ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের প্রস্তুতি। সোমবার বিকেলে এবং মঙ্গলবার ভোরে শহরের বিভিন্ন ঘাটে পুজো দেবেন ছট ব্রতীরা। রবিবার দুর্গাপুরের বেনাচিতি মার্কেট ও বিভিন্ন ফলের দোকানে উপচে পড়েছে ভিড়। কলা, নারকেল, আখ, লাউ, ফলমূল ও পুজোর সামগ্রী কেনার হিড়িকে পা ফেলার জায়গা নেই বাজারে।

ছট পুজো হল সূর্যদেব ও তাঁর পত্নী উষা দেবীর আরাধনা। এই পুজো মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষের অন্যতম প্রধান উৎসব। এটি সূর্যোপাসনা, জল, প্রকৃতি ও মানবজীবনের মধ্যেকার সামঞ্জস্যের এক অনন্য প্রকাশ। “ছট” শব্দের অর্থই হল ষষ্ঠী । কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠী তিথিতেই এই পুজো পালিত হয়।

বিশ্বাস করা হয়, সূর্যদেবই জীবনের শক্তি, আলো ও সুস্বাস্থ্যের দাতা। তাই ছট ব্রতীরা নির্জলা উপবাস করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এই উপাসনায় কোনো মূর্তি বা প্রতিমা থাকে না, থাকে প্রাকৃতিক উপাদান নদীর বা জলাশয়ের জল, সূর্যের আলো ও ফলমূল। পুজো চলাকালীন চার দিন ধরে ব্রতীরা শুদ্ধতা, সংযম ও নিষ্ঠার সঙ্গে নানা আচার পালন করেন ‘নহাই খাই’, ‘খরনা’, ‘সন্ধ্যা অর্ঘ্য’ ও ‘উষা অর্ঘ্য’। দুর্গাপুরের কুমার মঙ্গলম পার্ক, মোহিষ্কাপুর , বেনাচিতি , মামড়া ও রাজবাঁধ অঞ্চলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছট ঘাটগুলিতে চলছে আলোসজ্জা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। শহর জুড়ে এখন উৎসবের আবহ, বাজারে খুশির রোশনাই।
ছট পুজো শুধু ধর্মীয় আচার নয় , এটি আত্মসংযম, কৃতজ্ঞতা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার এক প্রতীক। দুর্গাপুর শিল্পনগরীতে এখন ভোরের নদীতীরে ঢেউ খেলছে আস্থার রঙ, ভক্তির সুর। সূর্যোদয়ের প্রথম আলোকরেখায় মিশে যাচ্ছে মানুষের আশা, প্রার্থনা আর অদম্য বিশ্বাস।
সমরেন্দ্র দাস, Lcw India দুর্গাপুর

