চিকিৎসার শহর আজ কাঁপছে নৃশংসতায়! ফের একবার চিকিৎসক তরুণীর উপর নারকীয় নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল দুর্গাপুরের শোভাপুরে অবস্থিত আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। মাত্র এক বছরের মধ্যে আরজিকর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পর ফের চিকিৎসা পড়ুয়া তরুণী ধর্ষিত হওয়ার প্রশ্ন উঠছে — “নারী আজ কতটা নিরাপদ?” ভিন রাজ্যের চিকিৎসা পড়ুয়া তরুনীর উপরে নৃশংসতা — জানা গেছে, নির্যাতিতা তরুণী উড়িষ্যার জলেশ্বর এর বাসিন্দা এবং দুর্গাপুর আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা শাস্ত্রে দ্বিতীয় বিভাগের অধ্যয়নরত। শুক্রবার রাতে হাসপাতাল সংলগ্ন জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় তাকে নিয়ে যায় তার এক সহপাঠী, এরপর সেখানে তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কলেজ ক্যাম্পাসে নেমে আসে প্রতিবাদের ঢেউ। ছাত্র-ছাত্রী, এন্টার্ন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সহকর্মীরা। একযোগে দোষীদের কঠোর শাস্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনর্বিবেচনার দাবি তোলেন। ক্ষুব্ধ অভিভাবক — নির্যাতিতার বাবা জানান, “কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আমরা অসন্তুষ্ট। উড়িষ্যা হলে রাতেই ব্যবস্থা নেওয়া হত। তার এই মন্তব্য রাজ্যের প্রশাসনিক তৎপরতার উপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে”।

ঘটনার খবর পেয়ে উড়িষ্যা থেকে দুর্গাপুরে পৌঁছে নির্যাতিতার মা কি জানালেন শুনে নেওয়া যাক।
ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি ও সিপিএম উভয়ই রাস্তায় নামে বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য পারিজাত গাঙ্গুলি বলেন, এই ঘটনা রাজ্যের আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। চিকিৎসক সমাজ আজ ভয় ও ক্ষোভে ফুঁসছে। অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে সিপিআইএম পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য পার্থ দাস জানান, “এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোন এফআইআর হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তারা সে বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। এমনকি নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করার কোনও অনুমতি দেয়নি। অবিলম্বে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে”।

ঘটনাস্তরে পৌঁছে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যা অর্চনা মজুমদার কলেজ কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তার বক্তব্য — “এটি শুধু এক তরুণী নয়, গোটা সমাজের সম্মানহানীর প্রতিক। এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার না হলে নারীর নিরাপত্তা এবং বিচারব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা পুরোপুরি নষ্ট হবে”।
এরপর তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়েও প্রশাসনের কাজে তার অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায় তিনি বলেন কেন ঘৃণা হয়নি দুর্ঘটনস্থল??
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশ্নচিহ্ন!

ঘটনার বহু সময় পর দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপারসন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় কলেজ ক্যাম্পাসে এসে আশ্বাস দেন — ক্যাম্পাসে সিসিটিভি স্থাপন বহির অঞ্চলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা কর্মী বৃদ্ধি করা হবে।
কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন, “ঘটনার ঘটার পরেই কেন এই ব্যবস্থা”? ঘটনার পরদিন সকাল থেকেই কলেজ চত্বরে শুরু হয়েছে অবস্থান বিক্ষোভ ও মোমবাতি মিছিল ছাত্র-ছাত্রীরা স্লোগানের মুখর — “আর নয় নীরবতা”, “দ্রুত বিচার চাই”, “ধর্ষকদের জন্য মৃত্যুদণ্ড চাই”। তাদের দাবি চিকিৎসা শেখার জায়গায় যদি সুরক্ষা না মেলে তাহলে সাধারণ নারী কোথায় নিরাপদ”? দুর্গাপুর জুড়ে আজ একটাই প্রশ্ন — আর কতবার?
চিকিৎসা মানে সেবা কিন্তু আজ সেই সেবিকরাই যখন বারবার নিগৃহিতা হন তখন সমাজের মানবিকতার ভিত্তি নড়ে যায় দুর্গাপুরের এই ঘটনা শুধু এক মেডিকেল কলেজে নয়, এটি গোটা সমাজের মানবিকতার পরীক্ষা। “আরজি করের তিলোত্তমা পেল না বিচার! দুর্গাপুরের তিলোত্তমা কি পাবে বিচার??
দুর্গাপুরে চিকিৎসক তরুনীর উপর এই নারকীয় নির্যাতন প্রমাণ করে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর আজও অন্ধকারে ঢাকা। প্রশাসন ও সমাজ — দুপক্ষের সময় এসেছে আত্মসমালোচনার। চিকিৎসা শেখার শহরে সেবিকা নিরাপত্তা কোথায়”? — এই প্রশ্ন আজ গোটা বাংলার।