ঐতিহাসিক এক ফুটবল টুর্নামেন্টের সাক্ষী হয়ে রইল দুর্গাপুর বাসী!
দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ পশ্চিম বর্ধমানে ইতিহাস সৃষ্টি করল!
এই টুর্নামেন্ট থেকে উঠে এলো বহু প্রতিভাবান ফুটবলার!
ক্রীড়া ও সংস্কৃতির এক মেলবন্ধন দেখা গেল এই ফুটবল উৎসবে!
পশ্চিম বর্ধমান এ প্রথমবার প্রদর্শনী ম্যাচে দেখা গেল ঘানা ও সেনেগাল দলকে !

সম্প্রতি ২৬ শে এপ্রিল সমাপ্ত হলো “দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ” ২০২৫ সিজন 1. গত ১৫ই এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকে দুর্গাপুরের তিলক ময়দানে দুর্গাপুর বি জোন ক্লাব সমন্বয়ের পরিচালনায় এবং ফুটবল প্রেমী রহমত আলমের প্রচেষ্টায় শুরু হয়েছিল “দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ”। আইপিএলের ধাঁচে এই প্রথমবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার ১২ টি ফ্রাঞ্চাইজি নিলামের মাধ্যমে ফুটবলার বাছাই করে। পরবর্তীতে ১৫ থেকে ১৮ ই এপ্রিল পর্যন্ত লিগ পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হয়, সেখান থেকে মোট আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে নকআউট পর্যায়ের খেলায় মোট চারটি দল সেমিফাইনালে অংশগ্রহণ করে দলগুলি যথাক্রমে : নবারুণ অ্যাথলেটিক ক্লাব, নেপালি পাড়া এফসি নাগার্জুন, সৌম্য ইলেভেন ও সিং এন্টারপ্রাইজ। সেমিফাইনাল খেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর নেপালি পাড়া এফসি নাগার্জুন ও নবারুন অ্যাথলেটি ক্লাব মেগা ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। কৃত্রিম আলো অর্থাৎ ফ্লাড লাইটে অনুষ্ঠিত হয় সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল খেলাটি। দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলার মধ্যে ছিল বেশ কিছু আকর্ষণ, যা এযাবৎ কালে দুর্গাপুরই নয়, পশ্চিম বর্ধমানের বুকে প্রথমবার। দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লীগের মেগা ফাইনাল খেলা শুরুর আগে ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পাহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের ওপর উগ্র জঙ্গিহানার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ২৭ জন নিহত পর্যটকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মেগা ফাইনালের সূচনা হয় ২হাজার সংগীত শিল্পীর সমবেত কন্ঠে “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা…” সংগীতের মধ্য দিয়ে।

এরপর দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন আতশবাজির প্রদর্শনী। জন্তু পর্যায়ের খেলার আগে অনুষ্ঠিত হয় ঘানা এবং সেনেগাল দলের একটি প্রদর্শনী ম্যাচ, যা পশ্চিম বর্ধমানের বুকে প্রথমবার এবং সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের বাছাই করা কয়েকটি টুর্নামেন্টে দেখা গেছে। প্রদর্শনী ম্যাচে ঘানা ২-০ গোল সেনেগাল দলকে পরাজিত করে। এই টুর্নামেন্টের মেগা ফাইনাল খেলায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কৃষি, গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত, দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক ডক্টর সৌরভ চ্যাটার্জী, দুর্গাপুর নগর নিগম প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারপারসন অনিন্দিতা মুখার্জি, সদস্য দীপঙ্কর লাহা সহ বহু প্রাক্তন ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা শুরুর আগে দুর্গাপুর ক্রীড়া জগতের ১৭ জন বিভিন্ন বিভাগের ক্রীড়াবিদকে সম্মাননা জানানো হয়। এছাড়াও সংবর্ধনা জানানো হয় বিশিষ্ট অতিথিদের। এরপর শুরু হয় দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের মেগা ফাইনাল খেলা। যার একদিকে দেখা যায় দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী নবারুণ অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিল সুসংগঠিত ফুটবলার নিয়ে তৈরি নেপালি পাড়া ফুটবল ক্লাব নাগার্জুন। চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলার শুরু থেকেই দুই দলের মধ্যে একটি রোমহর্ষক,হাড্ডাহাড্ডি ফুটবল খেলা দেখে মাঠে উপস্থিত উৎসাহী দর্শকরা। খেলার মূল পর্বে কোন দলই কোন গোল করতে না পারায় ম্যাচ পরিচালকের সিদ্ধান্তে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে রেফারি পাড়া এফসি নাগার্জুন ৪১ গোলে জয়ী হয়ে দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগের প্রথম বর্ষের চ্যাম্পিয়ন ঘোষিত হয়। এইখানে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছে নেপালি পাড়া এফসি ফুটবল দলের গোলরক্ষক অনুপ বাউরী, অনুপের হাতে পুরস্কার স্বরূপ তুলে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা নগদ। এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে নবারুণ অ্যাথলেটিক ক্লাবের আক্রমণ ভাগের বিদেশী খেলোয়াড় অ্যানোক, অ্যানোকের হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি ইলেকট্রিক স্কুটি, এই পুরস্কারটি স্পন্সর করেছিলেন “শের ই বেঙ্গলে”র কর্ণধার সর্বজিত মুখার্জি। এছাড় াও এই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে তুলে দেওয়া হয় এক লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার ও সুদৃশ্য ট্রফি এবং রানার্স দলের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৮০ হাজার নগদ টাকা ও সুদৃশ্য ট্রফি। সম্প্রীতি ও সমন্বয়ের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন দেখা গেল দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগে। শুধু দুর্গাপুরই নয়, পশ্চিম বর্ধমানের বুকে নজির স্থাপন করলো দুর্গাপুর বি জোন ক্লাব সমন্বয়ের উদ্যোগে আয়োজিত “দুর্গাপুর ফুটবল প্রিমিয়ার লিগ”। পশ্চিম বর্ধমানের ফুটবলে ইতিহাস রচিত হলো।
সমরেন্দ্র দাস, Lcw India দুর্গাপুর