স্বপ্ন বড় হতে হবে, আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করতেই হবে! ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম থাকলে অভাব কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না!
আমাদের প্রতিবেদনে অভাবকে নিত্য সঙ্গী করে স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ের গল্প এক ফুটবলারের! পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখড়ার প্রত্যন্ত এক এলাকা থেকে উঠে আসা এক অদম্য জেদী ফুটবলারের জীবনগাথা – “মৃন্ময় সূত্রধর” যে ফুটবলের মাঠে সকলের কাছে “গুন্ডা ভাই” নামে পরিচিত। জীবনের কঠিন বাস্তবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে ফুটবল মাঠে নিজের জায়গা করে নেওয়া এই যুবকের গল্প যেন সিনেমার কাহিনী কেও হার মানায়। মৃন্ময় কোন ক্রীড়া ঐতিহ্যশালী পরিবার থেকে উঠে আসেনি, এমনকি তার পরিবারের কেউই কখনো ফুটবল ছুঁয়েও দেখেনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল এক অন্যরকম স্বপ্ন, একজন বড় ফুটবলার হওয়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যে সংগ্রাম করতে হয়েছে তা অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না। বাড়ির সামনে ফুটবল মাঠ, আর সেখানেই একরত্তি বয়স থেকেই মৃন্ময়ের ফুটবলে হাতে খড়ি। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ছিল মৃন্ময়ের। অথচ পরিবারের কেউ কখনো ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তবু নিজের মধ্যে জন্মানো সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পিছপা হয়নি সে…

বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতায় তার খেলা সকলের নজর কেড়েছে। মিডফিল্ডে তার নিয়ন্ত্রণ, পাসিং এবং খেলার গতি পরিবর্তনের দক্ষতা, ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে অভিজ্ঞ মহলে। অনেকেরই মত সুযোগ পেলে মৃন্ময় আর উচু পর্যায়ে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে। সবচেয়ে প্রশংসনীয় বিষয় হলো অভাব সত্ত্বেও পরিবারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে মৃন্ময়ের প্রতি। বাবা-মা হয়তো অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন না, কিন্তু সাহস দেন প্রেরণা দেন। মৃন্ময়ের খেলা সম্পর্কে কি জানালেন তার পরিবারের লোকজন এবং তার পিছনে তাদের সহমতই বা কতটা শোনাবো আপনাদের।অন্যদিকে মৃন্ময়ের কাকা গুন্ডার খেলা দেখে নিজের ছেলেকেও পাঠান মৃন্ময়ের সঙ্গে ফুটবল প্র্যাকটিস করতে। জ্যাঠা ও কাকা মৃন্ময়ের ফুটবলে আপ্লুত। কি জানালেন তারা শুনে নেওয়া যাক।

নিশ্চয়তা ছিল না, তা সত্ত্বেও ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা এক মুহূর্তের জন্যও কমেনি মৃন্ময়ের। স্কুল ছুটি পর বা ছুটির দিনে মাঠে চলে যেত সে খালি পায়ে। ছেঁড়া বুট পড়ে খেলত; তবুও হার মানেনি। অবশ্য এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, সংযম এবং অধ্যবসায়। ফুটবল খেলার পাশাপাশি রং মিস্ত্রির কাজ করে উপার্জন করে সে। রঙের ব্রাশ, আর মাঠের ফুটবল – দুটোই যেন তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কখনো বাড়ির দেওয়ালে তুলি হাতে রং করছে, আবার কখনো ফুটবল পায়ে মাঠে ঘাম ঝরাচ্ছে। কঠিন এই জীবন যুদ্ধে পেশাও প্যাশনের মধ্যে এক ভারসাম্য রেখে এগিয়ে চলেছে মৃন্ময়। এই দ্বৈত চরিত্র পরিচয়ের ভার বহন করেও সে হার মানেনি। তবে তার পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর প্যাশন, অনুপ্রেরণা হতে পারে আগামী প্রজন্মের হাজারো তরুণের। বলাই বাহুল্য এই জীবন যুদ্ধে গড়ে উঠেছে তার ব্যক্তিত্ব; একজন সংগ্রামী আত্মবিশ্বাসী ও স্বপ্নবাজ যুবকের প্রতিচ্ছবি। তবুও নিজের মধ্যে জন্মানো সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতে পিছপা হয় নি। জীবনের প্রতিটি বাঁকে যেখানে অভাব আর দারিদ্র্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে প্রতিদিন নতুন উদ্যমে লড়াই করে এগিয়ে চলেছে মৃন্ময়। বর্তমানে মৃন্ময়ের স্বপ্ন একটাই একদিন বড় ক্লাবের হয়ে খেলা এবং দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সে এখনো লড়াই চালিয়ে আছে তার গল্পে আমাদের শেখায় – “স্বপ্ন বড় হতে হবে, আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করতেই হবে”।
সমরেন্দ্র দাস, Lcw India উখড়া